২০২৩ সাল থেকে দেশে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের জন্য সরকার নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। মঙ্গলবার (২ মে ২০২৩) রাতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এই নির্দেশনা জারি করে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শ্রেণিশিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে নতুন এই নির্দেশনায়।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের করণীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের যথাযথভাবে প্রতিপালন করার জন্যও বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের করণীয়:
১) নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা।
২) সঠিক সময়ে পড়াশোনা করা, খাওয়া, ঘুমানো এবং মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলায় অংশ নেওয়া।
৩) এনসিটিবি প্রণীত পাঠ্যপুস্তক ও সম্পূরক পঠন সামগ্রী পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
৪) নতুনকে গ্রহণ করার উপযুক্ত মানসিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করা।
৫) সরকারের শিখন সামগ্রী যথাসময়ে সংগ্রহ করা।
৬) শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে অ্যাক্টিভিটি বেইজ লার্নিং কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা।
৭) বিদ্যালয় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শ্রেণি শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করা।
৮) অবসর সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সৃজনশীল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
৯) শিখন সংশ্লিষ্ট যে কোনও বিষয় নিয়ে অভিভাবকের (মা/বাবা) সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ গ্রহণ করা।
১০) নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শিখনের সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করা।
১১) দলগত কাজে সহপাঠীদের মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা, সততা ও নৈতিকতা বজায় রাখা।
১২) স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য গঠিত ক্লাবগুলোর মধ্যে অন্তত দুটি ক্লাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করা।
অভিভাবকদের করণীয়:
১) সন্তানদের/শিক্ষার্থীদের নিজের এবং বাড়ির ছোট ছোট কাজগুলো করানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা।
২) সন্তানদের/শিক্ষার্থীদের সময় দেওয়া, তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা।
৩) সন্তানদের/শিক্ষার্থীদের ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া এবং ভুল/অপ্রয়োজনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করা।
৪) কারিকুলাম বিস্তরণে অভিভাবকদের যে দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করা।
৫) সন্তানদের/শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৬) সন্তানদের/শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট/কোচিংয়ে নিরুৎসাহিত করা।
৭) সন্তানদের/শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে নিরপেক্ষতা, সততা ও নৈতিকতা বজায় রাখা।
৮) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকা।
শ্রেণি শিক্ষকদের করণীয়:
১) টিচার্স গাইড ও পাঠ সংশ্লিষ্ট উপকরণসহ শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করা।
২) গতানুগতিক শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি পরিহার করে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করা। প্রকৃতপক্ষে প্রচলিত ভূমিকার ঊর্ধ্বে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক হয়ে উঠবেন সহ-শিক্ষার্থী।
৩) হোম ভিজিট ও উঠান বৈঠক করা।
৪) প্রকল্পভিত্তিক কাজ ও অনুসন্ধানমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, ডায়রি ব্যবহারে উৎসাহিত করা।
৫) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য সহয়তামূলক একীভূত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করবেন যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
৬) শ্রেণি শিক্ষক যেসব সমস্যা চিহ্নিত করবেন, তা নিয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সাপ্তাহিক সভায় আলোচনা করা ও সমস্যা সমাধানের কৌশল নির্ধারণ করা।
৭) বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৮) স্লো লার্নার ও অ্যাডভান্স লার্নার চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং তাদের শিখন পরিস্থিতি উন্নয়নে কার্যকর কৌশল প্রয়োগ।
৯) মূল্যায়নের মূলনীতি অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যোগ্যতার মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ ও মূল্যায়নের ধারাবাহিক রেকর্ড সংরক্ষণ।
১০) শিক্ষার্থীদের দলগত কাজসহ সামগ্রিক মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা, সততা ও নৈতিকতা বজায় রাখা।
১১) শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখন পরিবেশ তৈরি করতে শিক্ষককে ফ্যাসিলিটেটর বা সহায়কের ভূমিকা পালন করা।
১২) শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে কারিকুলাম সংশ্লিষ্ট বাস্তব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আদান প্রদানের একটা অনুকূল পরিবশে তৈরি করা।
প্রতিষ্ঠান প্রধানদের করণীয়:
১) এনসিটিবি রুটিন/গাইড লাইন অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম নিশ্চিত করা।
২) শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং শিখন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা।
৩) শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা।
৪) শিক্ষাক্রমে নির্দেশিত কৌশল ও পদ্ধতি শ্রেণি পাঠদানে অনুসৃত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা।
৫) শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ছোট পরিসরে শিক্ষা উপকরণ মেলার আয়োজন করা।
৬) শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ অংশীজনের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণের জন্য সমন্বিত গণযোগাযোগ কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৭) বছরে তিনটি অভিভাবক সমাবেশ নিশ্চিত করা এবং অভিভাবকদের সুবিধাজনক গ্রুপ করে শ্রেণি কার্যক্রম দেখার ব্যবস্থা করা।
৮) যে সব শিক্ষকের লেখার অভ্যাস রয়েছে তাদের লিখনীতে নতুন কারিকুলামের পজিটিভ দিক তুলে ধরার জন্য উৎসাহ প্রদান করা।
৯) প্রতি তিন মাসে কমপক্ষে একবার শিক্ষকদের ইনহাউজ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।
১০) প্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত সব বিষয়ই যথাসম্ভব বোঝার চেষ্টা করা। এতে তিনি আন্তঃবিষয় সম্পর্কটি বুঝতে ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
১১) প্রাত্যাহিক সমাবেশে নীতি বাক্যের সঙ্গে কারিকুলাম বাস্তবায়নে শপথ নিশ্চিত করা।
১২) প্রতিষ্ঠানের ফটকে দৃষ্টিগোচর স্থানে কারিকুলাম বাস্তবায়নের স্লোগান/স্বপ্ন/প্রত্যয় লেখা।
১৩) নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিখন-শেখানো কার্যক্রম নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা ও শিক্ষকদের পরামর্শ দেওয়া।
১৪) শিক্ষার্থীদের দ্বারা কম্পিউটার ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, গ্রিন ক্লাব/পরিবেশ ক্লাব, সাংস্কৃতিক ক্লাব, ক্রীড়া ক্লাব, হেলথ ক্লাব পঠন ও সক্রিয় রাখায় উৎসাহিত করা।
উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পর্যায়ে করণীয়:
১) পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক সহায়িকা এবং শিক্ষা উপকরণ যথাসময়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
২) শিক্ষকরা পাঠ সংশ্লিষ্ট উপকরণ ও এনসিটিবি প্রদত্ত রুটিন/গাইড লাইন অনুযায়ী শিখন-শেখানো কার্যক্রম
পরিচালনা করছেন কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা।
৩) শিক্ষার্থীদের উপকরণ মেলার আয়োজনে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সহযোগিতা করা এবং নির্বাচিত সেরাদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৪) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা যেন নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে খরচ হয় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে আলোচনা করা।
৫) প্রধান শিক্ষকদের কারিকুলাম বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ ও অভিভাবক সমাবেশ নিশ্চিতকরণে উৎসাহিত করা।
৬) প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিয়মিতভাবে সরাসরি অথবা জুম সভার আয়োজন করা এবং মাসিক প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠানো।
৭) প্রন্তিক এলাকা ভিজিট এবং মনিটরিং করা। সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া।
৮) নোট-গাইড বই, কোচিং বিষয়ে নীতিমালা বহির্ভূত কার্যক্রম বন্ধের জন্য উপজেলা/থানা পর্যায়ে মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া।
জেলা শিক্ষা অফিসার পর্যায়ে করণীয়:
১) উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকদের কার্যক্রম সমন্বয় করা।
২) উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকদের কার্যক্রম সমন্বয় করা।
৩) উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের ভ্রমণসূচি পর্যালোচনা করা, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা/পরামর্শ দেওয়া।
৪) উপকরণ মেলার আয়োজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে মেলায় তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৫) এলাকার শিক্ষা সংশ্লিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মেলায় উপস্থিত করানো এবং মেলা থেকে শিক্ষার উপকরণ ক্রয়ে উৎসাহিত করা।
৬) মাসিক প্রতিবেদন আঞ্চলিক উপপরিচালক বরাবর প্রেরণ করা।
৭) স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করা।
৮) উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে জুম/সরাসরি সভার আয়োজন করা।
৯) জেলায় এ সংক্রান্ত যাবতীয় আয়োজনে আঞ্চলিক উপপরিচালক এবং আঞ্চলিক পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও সহযোগিতা নেওয়া।
১০) স্কুল পরিদর্শনে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা ও পরমর্শ দেওয়া।
আঞ্চলিক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের করণীয়:
১) শিক্ষক গাইড (টি.জি), পাঠ্যপুস্তক বিতরণ বিষয়ে এনসিটিবির সঙ্গে সমন্বয় করে তথ্য দ্রুত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে আপডেট দেওয়া।
২) শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ওপর প্রস্তুত করা বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ তৈরি করে থানা/উপজেলা/জেলা/আঞ্চলিক পর্যায়ের মাসিক সমন্বয় সভায় প্রচার করা।
৩) স্থানীয় সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধি যেমন- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের নিয়ে একদিনের ওরিয়েন্টেশন কোর্সের ব্যবস্থা করা।
৪) জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারগণ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন যথাযথ মনিটরিং করছেন কিনা তা তদারকি করা।
৫) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করে সময়ে সময়ে জুম সভার আয়োজন করা।
৬) নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে সবল ও দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করে কার্যকর কৌশল ও নীতি নির্ধারণে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর করা।
৭) উপকরণ মেলায় অংশ নেওয়া, উপকরণ ক্রয় ও বিক্রয়ে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করা।
৮) স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করা।
৯) প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নের সব পর্যায় মনিটরিং করা ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো।
১০) নিয়মিত অংশীজন সভার আয়োজন করে এ সংক্রান্ত গৃহীত মতামত/সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা।
১১) সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জুম সভার আয়োজন করা এবং তার প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো।